প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘যত দ্রুত এই মাতৃভূমিকে আমরা উন্নত করতে পারব, ততই আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারব।’
৫১ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায় ৯০টি গ্রামে ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরপর চট্টগ্রামের পটিয়ার ১০৮ মেগাওয়াট ইসিপিভি চট্টগ্রাম লিমিটেড, কুমিল্লার জাঙ্গালিয়ার ৫২ দশমিক ২ মেগাওয়াট লাকধানাভি বাংলা পাওয়ার লিমিটেড, গাজীপুরের কড্ডার ১৫০ মেগাওয়াট বিপিডিবি-আরপিসিএল পাওয়ার জেন লিমিটেড এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি (এসটি ইউনিট) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।
এ ছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোগাযোগ সম্প্রসারণে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের অংশ হিসেবে পটুয়াখালী জেলায় পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে নবনির্মিত শেখ কামাল সেতু ও শেখ জামাল সেতু উদ্বোধন এবং সিলেট সড়ক জোনে ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ইবিবিআইপি) আওতায় নবনির্মিত ১৬টি সেতু একযোগে উদ্বোধন করেন।
রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রী সিগন্যালিং ব্যবস্থাসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার ডাবল লাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত দ্বিতীয় রেললাইনে রেল চলাচলের উদ্বোধন করেন।
এরপর শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধনসহ নারায়ণগঞ্জ শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত সোনাকান্দা পানি শোধনাগারেরও উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী এদিন জয়পুরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনসহ এ জেলার বিভিন্ন স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না, একটা মানুষও না খেয়ে মরবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।
স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের জন্য যে কিছু করতে পারছি, এটুকুই কেবল সান্ত্বনা।’
এ বছর ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালে আমরা কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করব, সে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আমরা ২০১৬ সালে ১৬ হাজার মেগাওয়াট, ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। দোয়া করবেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়।
প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছি। ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে এরই মধ্যে ৭৬ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি। যেসব এলাকায় গ্রিডলাইন নেই, সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সারা দেশ রেলের আওতায় আসবে
সারা দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল কখনো রেল দেখেনি, সেখানেও রেল যাবে। টাঙ্গাইলবাসীকেও রেলসেবার আওতায় আনা হবে। পটুয়াখালী, পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলওয়ে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরুর জন্য তিনি রেলমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
রেলেও গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রেলে অল্প খরচে চলাচল ও মালামাল পরিবহন করা যায়। এ জন্য সরকার রেলের ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলে রেল হারিয়ে যেতে বসেছিল এবং মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল।
জনগণকে এ সময় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। এ জন্যই আমরা বিভিন্ন উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে কাজ করতে পারছি।’
গণভবনে অনুষ্ঠানস্থলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ ভিডিও কনফারেন্সটি পরিচালনা করেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ভৈরব থেকে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, কুমিল্লা থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, চট্টগ্রাম থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, পটুয়াখালীতে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ছাড়াও সংশ্লিষ্ট জেলার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা, সাংসদ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, জেলা প্রশাসকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।