ছৈয়দ আন্ওয়ার : শিক্ষার হাত ধরেই সভ্যতা এগোয়। শিক্ষা ছাড়া সভ্যতা অকল্পনীয়। সুতরাং শিক্ষাকে সহজ এবং বোধগম্য করে তুলতে পারলে তবেই সভ্যতা পাবে তার সঠিক রূপ। নচেৎ সভ্যতা বলতে আমাদের মধ্যে সেই ভ্রান্ত ধারণাই জেঁকে বসবে যা প্রাশ্চাত্য চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ এমনকি কথা-বার্তায়ও জায়গা করে নেবে বিদেশি সংস্কৃতি। ইতোমধ্যেই বিদেশি সংস্কৃতি যে আমাদের অনেকখানি প্রভাবিত করে ফেলেছে তা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না। কারণ বাংলা ভাষা অনেকটাই বাংলিশে পরিণত হয়ে গেছে। শুধু কথ্য ভাষায় নয়, লেখ্য ভাষায়ও ইংরেজি যথেষ্ট প্রভাবশালী।
ইংরেজি ভাষাকে বাদ দিয়ে জাতীয় উৎকর্ষ অসম্ভব। তাই বলে বাংলা ভাষাকে অবহেলা করে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব কোথায়? যে জাতি বিশ্বের একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্যে প্রাণ দিয়েছে! সেই ভাষার দীনহীন অবস্থা কি সেই জাতির সভ্যতাকে পূর্ণাঙ্গভাবে বিকোশিত করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে?
চলছে ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস। আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে বাংলা ভাষার মর্যাদা দানের লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছিল রফিক, জব্বারসহ অনেকে। অর্ধশতকেরও বেশি সময় পার করেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রবর্তন সম্ভব হয়নি। আইন-প্রণয়ন করেও উচ্চ আদালতে এবং উচ্চশিক্ষায়, গবেষণায় বাংলার প্রচলন বাস্তবায়ন হয়নি। বরং শিশুশিক্ষা থেকে ইংরেজি মাধ্যম অধিক প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে আজকের প্রজন্ম বাংলা ভাষা রপ্ত করার চেয়ে ইংরেজিকে সভ্যতার মাপকাঠি হিসেবে দেখছে। অবশ্য শিক্ষা কারিকুলামের কারণেই তা ঘটছে। আমরা হয়তো সেই সত্যকে ভুলে যেতে বসেছি যে, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপরে ইংরেজি শেখার পত্তন।’ _এটাই আমাদের সংস্কৃতির মূল প্রতিপাদ্য হওয়ার কথা ছিল। আমরা কি তা পারছি? তা পারছি না বলেই আমাদের সংস্কৃতিতে ঢুকে পড়েছে নানা বিজাতীয় সভ্যতার সংস্করণ। আর তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের সভ্যতা নানা সংকটের মুখে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য শুধু ফেব্রুয়ারিকে বেছে নিলে চলে কি?
পুনশ্চ : উন্নত দেশগুলোতে যত গবেষণা-পর্যালোচনা চলে তার প্রত্যেকটিকে তাদের ভাষায় অনুবাদ করার প্রচলন আছে। তাতে তাদের মেধা বিকাশে সহায়তা করে সঠিকভাবে। আমরা আজও তা পারছি না কেন? আমরা কেন পরের ভাব-মর্জিকে মুখস্থ করছি? আমাদের ভাষায়, আমাদের মননে-চিন্তায় তা প্রকাশ করতে পারলে নিশ্চয়ই আমরা আমাদের সভ্যতাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নেয়ার অবকাশ পাব। আমাদের সেই চেষ্টা করতে হবে।