Kbdnews : মেহেরপুরের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাদেক হোসেনর(৮৬) কেউ খোঁজ রাখে না। ৭১’র রণাঙ্গণের ৮ নং সেক্টরের লড়াকু সৈনিক। তিনি বর্তমানে গুরম্নতর অসুস’। ৫ বছর ৩ মাস বিছানায় পড়ে আছে। মৃত্যু শয্যায় দিন গুনছেন। তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলেও আরো সরকারি ভাবে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস’া্ হয়নি। তিনি দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হসত্মড়্গেপ কামনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলা ১৩৯৩ সালের ১৮ পৌষ শনিবার দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা প্রকাশ হয়। এ তালিকায় এই মুক্তিযোদ্ধার নাম ৫ নম্বারে লিপিবন্ধ আছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার মুক্তিবার্তা লাল বইয়ে তার মুক্তিযোদ্ধা নং ০৪১০০১০৪৫৪। আইডি নং ০৪০৮০১০৩৩৭। মুক্তিযোদ্ধা ভোটার নং ৪২৪। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সনদ নং ম-৪৯৭৩। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মদ এই মর্মে সনদপত্র দিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে তার সকল তথ্য পাঠিয়েছেন। ২০১৫ সালে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রাণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে ছাদেক হোসেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এই মর্মে সুপারিশ করেছেন। কিনত্ম তার নামে আজো গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। তিনি বলেন, তার নামে গেজেট প্রকাশ করা হলে, তিনি মরে ও শানিত্ম পাবেন।
১৯৪৮ সাল থেকে তিনি আনসার কমান্ডার ছিলেন। তার ওসত্মাদ ছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সেনাবাহিনীর হাবিলদার মোসত্মাক খান। তিনি ১৯৭১ সালে মেহেরপুর মহকুমা স্বাস’্য বিভাগের প্রধান ডাক্তার সামসুজ্জোহা কোরাইশীর অধিনে তিনি ড্রাইভার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার সাথে ছিল বসনত্ম নির্মুল অভিযানের ল্যান্ড রোভার জীপ গাড়ি(নং-ঢাকা-ব-৯৬)। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারনে তিনি বলেন, পাক সেনা ও তাদের দোসরদের অত্যাচারে এলাকাবাসি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। পাকসেনারা মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রাম মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি সন্দেহে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। অনেক মা-বোনের উপর অত্যাচার, নিপিড়ন করেছিল্ । তাদের প্রতিহত ও মেহেরপুর থেকে পাকসেনাদের নির্মুল করার প্রতিজ্ঞা করে তার ৭ ভাই, ৫ভাতিজা ও ৩ ভাগনিসহ সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের ৬৪জন আনসার সদস্যদের সাথে নিয়ে তিনি স্বপরিবারে ভারতের নদীয়া জেলার তেহট্টো থানার লালবাজারে চলে যান্। সেখানে ইয়্যুথ ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। তার কাজের পারর্দর্শিতায় সেখান থেকে তাকে ১৪দিন পর লালবাজারের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন ইয়ার আযম চৌধুরীর কার্যালয়ে মেডিক্যাল টিমে কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়। এই মেডিক্যাল টিমের প্রধান ছিলেন ডাক্তার আব্দুল মান্নান। রণাঙ্গণে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার কাজে তিনি নিয়োজিত হন। বাংলাদেশের সীমানেত্ম পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, গুলি, ওষূধপত্র ও খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করতেন। প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তিনিও অস্ত্রহাতে মুখামুখি যুদ্ধে অংশগ্রহন করতেন। গুলিবিদ্ধ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের গাড়ি করে ভারতের শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করতেন। এছাড়া তিনি ক্যাপ্টেন ইয়ার আযম চৌধুরীকে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন মিশনে নিয়ে যেতেন। তিনি একদিন ভারতের চাপড়া মুক্তিযোদ্ধা মেডিক্যাল টিমে গিয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের মেডিক্যাল টিমের জেনারেল সেক্রেটারী ডাক্তার সামসুজ্জোহা কোরাইশের সন্ধান পান। তারপর থেকে তিনি সেখানে কাজ করতে থাকেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারনে তিনি আরো বলেন, এর আগে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মেহেরপুর মহাকুমা প্রশাসক তৌফিক-ইলাহী ও স’ানিয় এমপি মরহুম ছহিউদ্দিনের নির্দেশে ঢাকা থেকে আসা এমপি আশরাফুল ইসলাম নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে তিনি জীব গাড়ি করে মেহেরপুরের ইছাখালি সীমানত্ম পেরিয়ে ভারতের বেতাই উঠেন। সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে কৃষ্ণনগর হয়ে কলকাতার মগবাজারের এক বাসায় তাকে পৌছিয়ে দেন। এ সময় সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেন এবং বিভিন্ন প্রশ্ন রাখেন। ভারতে যাওয়ার সময় এ গাড়িতে আরো ২ আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন। এরা হলেন মেহেরপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম খাদেম আলি ও স’ানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আশরাফুল হক পোটল। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি নিজ গ্রাম মেহেরপুর সদর উপজেলার বন্দর গ্রাম থেকে সহকর্মী ৬৪ জন আনসার সদস্যদের নিয়ে ৭১’র ৩১ মার্চ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন ও জিলা স্কুলে পাকসেনাদের সাথে মুখামুখি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। এ যুদ্ধ পরিচালনা করেন মেহেরপুরের গাংনীর মহাম্মদপুর গ্রামের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন এমপি নূরম্নল হক ও ক্যাপ্টেন ইয়ার আযম চৌধুরী। এ ভয়াবহ যুদ্ধে অনেক আনসার, ইপিয়ার , মুজাহিদ ও পুলিশের প্রান ঝরে যায়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই যুদ্ধে তার আপন ভাগনে মরহুম আনসার মুনসুর আলি পাকসেনাদের গুলিতে মারাত্বক আহত হয়। বাড়িতে নিয়ে আসার ৬ দিন পর চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। রাষ্ট্রিয় ভাবে তার কেউ খোঁজ রাখেনি। তার কবরও নিশ্চিন্ন হয়ে গেছে। ভাগনে মারা যাওয়ার পর এবং পাকসেনাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে দেশের ভালবাসায় তিনি ভারতে চলে গিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি ভাগনে মুনসুর আলির ছবিকে বুকে ধারন করে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আর কোন মুক্তিযোদ্ধাকে চিকিৎসার অভাবে মরতে দেবেন না। কিনত্ম তিনিই এখন চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন। ডিসেম্বর মাস আসলে ভাগনের মারা যাওয়ার স্মৃতি মনে পড়লেই রাতের আধারে সকলের অগোছরে গুমরে কাঁদেন। তিনি বলেন শানত্মনার ভাষা খুজে পাইনি। এখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তবুও তিনি কোন জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ হলেই কষ্ট হলেও সেখানে ছুটে যেতেন। সহকর্মীদের কাছে পেয়ে একটু শানিত্ম পেতেন।
তিনি আরো বলেন, গত ১৬ আগষ্ট-২০১৪ ভোরে নামাজের জন্য ঘর থেকে উঠানে নামলে বৃষ্টির পানিতে পা পিছলিয়ে মাটিতে পড়ে যান। এই দুর্ঘটনায় তার ডান পায়ের হিপ জয়েন্টের ৩টি হাড় ভেঙ্গে যায় এবং গুরম্নত্বর আহত হয়। ফলে তার উচ্চতর চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন তাকে এ্যম্বুলেন্স যোগে গত ১৭ আগষ্ট/১৪ গভীর রাতে ঢাকায় আনেন। ঐ রাতেই ঢাকার ১৫ ধানমন্ডিতে অবসি’ত নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৮ আগষ্ট অপারেশন করা হয়। তার শেষ সম্বল ২লড়্গাধিক টাকা খরচ করেও আজো সুস’ হতে পারেননি। প্রতিদিনের চিকিৎসার ব্যয় চালাতে আর পারছেন না। তিনি প্রতিদিন অসহ্য ব্যথার যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়ে থাকেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে আমি কি পেলাম। এখন তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তার পরিবারের আবেদন, সরকারি তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা সেবা দেওয়া হলে তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।