স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইলে এক মাদ্রাসাছাত্রীকে অপহরণের পর গণধর্ষণের দায়ে পাঁচ ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ আদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ি গ্রামের সুনীল চন্দ্র শীলের ছেলে সাগর চন্দ্র শীল, দিগেন চন্দ্র শীলের ছেলে গোপী চন্দ্র শীল, চাড়ালজানি গ্রামের বাদল চন্দ্র মনিঋষির ছেলে সঞ্জিত চন্দ্র মনিঋষি, সুনীল মনিঋষির ছেলে সুজন মনিঋষি এবং মনীন্দ্র চন্দ্রের ছেলে রাজন চন্দ্র।
দণ্ডপ্রাপ্ত সঞ্জিত চন্দ্র মনিঋষি ও গোপী চন্দ্র শীল রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অন্য তিন আসামি জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছে। রায়ের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী কেঁৗসুলি (পিপি) একেএম নাসিমুল আক্তার জানান, ২০১২ সালে সাগর শীলের সঙ্গে ভুঞাপুরের মাদ্রাসাছাত্রীর মোবাইল ফোনে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই বছর ১৫ জানুয়ারি সাগর ভুঞাপুর এসে ওই ছাত্রীকে কৌশলে মধুপুরে নিয়ে যায়। মধুপুরের চাড়ালজানি গ্রামে দ-িত রাজনদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ওই ছাত্রীকে সাগরের সঙ্গে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু বিয়েতে রাজি না হওয়ায় সাগর তাকে ধর্ষণ করে। পরে সেখানে আটকে রাখে।
তরুণীকে ১৭ জানুয়ারি রাতে মধুপুরে বংশাই নদীর তীরে নিয়ে পাঁচজন পালাক্রমে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়। পর দিন ১৮ জানুয়ারি সকালে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে। পরে তার অভিভাবকরা এসে বাড়ি নিয়ে যায়। ওই দিনই ওই ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে ভুঞাপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যতান দমন আইনে মামলা করেন। মামলার দিনই পুলিশ আসামি সুজনকে গ্রেফতার করে। সুজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। পরে অন্য আসামিও গ্রেফতার হয়। তদন্ত শেষে ভুঞাপুর থানার পুলিশ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলার বাদীকে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষ থেকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়। রায়ের পর তিনি জানান, রায়ে তারা সন্তুষ্ট। ন্যায্য বিচার পেয়েছেন। টাঙ্গাইল জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ আরো বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ধর্ষণের নতুন আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ে স্বাক্ষর করার পর টাঙ্গাইলের গণধর্ষণ মামলার রায়টি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এ কে এম নাসিমুল আক্তার বলেন, এই মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আদালত দেখেছেন।
তিনি বলেন, পুরনো আইনে এ মামলার রায় হলেও নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর ধর্ষণ মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদ- হওয়ার ঘটনা একটি যুগান্তকারী রায়। এটি ধর্ষকদের জন্য বিশেষ বার্তা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা মিয়া জানান, রায়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’-এর যে খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়, সেই অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি এ অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন। জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হলো। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এটি আইন আকারে পাস হবে। এর আগে গত সোমবার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হবে। এর আগে এটির আইনি যাচাই ( ভেটিং) হবে। যেহেতু সংসদ অধিবেশন আপাতত চলমান নেই, তাই সরকার সংশোধিত আইনটি অধ্যাদেশ হিসেবে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে সই করার পর থেকেই আইনটি কার্যকর হবে। আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি
মৃত্যুদ- রাখার পাশাপাশি আরো দুটি সংশোধনী আনা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো যৌতুকের ঘটনায় মারধরের ক্ষেত্রে (ধারা ১১-এর গ) সাধারণ জখম হলে তা আপসযোগ্য হবে। এছাড়া এ আইনের চিলড্রেন অ্যাক্ট-১৯৭৪-এর (ধারা ২০-এর ৭) পরিবর্তে শিশু আইন ২০১৩ প্রতিস্থাপিত হবে।