
স্টাফরিপোটার : চুয়াডাঙ্গার দু’টি গোডাউন থেকে সরকারি ১২৬৬ বসত্মা চাউল জব্দ করা হয়েছে। সোমবার সকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ীর গোডাউন দু’টি তাৎক্ষনিকভাবে সীলগালা করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন পৃথক দু’টি তদনত্ম কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা শহরের চাল ও গম ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সাতগাড়ী গ্রামে ২টি গোডাউন রয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে তার গোডাউনে সরকারি চাল ট্রাকযোগে আনলোড করা হয়। এর মধ্যে একটি গোডাউনে ৬০০ ও অপরটিতে ৬৬৬ বস্তা রাখা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিটি ৩০ কেজি ওজনের চাউল বস্তার গায়ে লেখা রয়েছে ”শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ”। সোমবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ও খাদ্য অধিদপ্তরের একটিদল সাতগাড়ী এলাকার দু’টি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে সরকারী চাউল উদ্ধার করে।
গোডাউন মালিক নজরুল ইসলাম বলেন চাউলের মালিক চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার গৌতম ও অশোক। তারা মেহেরপুরের গাংনী খাদ্য গোডাউন থেকে চাউলগুলো নিয়ে এখানে রেখেছে। নজরুলের কথায় অসঙ্গতি লক্ষ্য করায় চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান গোডাউন দু’টিতে সিলগালা করে দেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন,চাউল জব্দের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মুনিরা পারভিনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দু’জন সদস্য হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিকুর রহমান ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম।
গাংনী উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান,মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য ও গাংনী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের অনুকুলে বরাদ্দ হওয়া প্রায় ১৬০ টন কাবিখার চালের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে কাথুলী ইউপি সদস্য ভাবিরন নেছার নামে ৩ টন,মটমুড়া ইউপি সদস্য লাভলী খাতুনের ৩.৫৫ টন,মটমুড়া ইউপি সদস্য সাজাহান আলীর ৬ টন,ধানখোলা ইউপি সদস্য বসির উদ্দীনের ৬টন,বামন্দী ইউপি সদস্য জিয়ারুলের ৯টন,বামন্দী ইউপি সদস্য নাজমিন ৬ টন ও বামন্দী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের নামে ৩টনসহ মোট ৩৭ টন যা ১২৬৬ বসত্মা চাউল ছাড় করা হয়। প্রকল্প সভাপতিরা নিজে চাউল বুঝে নিয়ে ট্রাক যোগে খাদ্য গুদাম ত্যাগ করেছে। পরে কি হয়েছে জানিনা। তিনি আরো জানান,গত ৩১ মে কাবিখার চাউল উত্তোলনের শেষ সময় হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়িয়ে ১০ জুন করা হয়।
কাথুলী ইউপি সদস্যা ভাবিরন নেছা জানান, তার নামে ৩ টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি শুধু মাত্র স্বাক্সর করেছেন এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না।
মটমুড়া ইউপি সদস্য সাজাহান আলী জানান, এমপি সাহেব ৫শত ফিটের একটি রাস্তার পিআইসি করেছিলেন। সেই রাস্তার কারণে ৬টন চাউল ডিওতে সই করে দিয়েছি বাকীটা এমপি সাহেব জানেন।
ধানখোলা ইউপি সদস্য বসির উদ্দীন জানান,আমি ৬টন চাউল তুলেছেন। এবং তা স্তানীয় গম ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখনও টাকা দেয়নি।
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি জানান, চাউল জব্দের ঘটনায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক,জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা। কমিটিকে আগামি বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মেহেরপুর জেলা আ’লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহান হোসেন বলেন,ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকলে অত্যন্ত দু:খজনক। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রমাণিত হলে যে জড়িত থাকবে। তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে।
মেহেরপুর ২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য ও গাংনী উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন,এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।